Friday, 17 July 2020

করোনার ভ্যাকসিন ও কর্পোরেট


করোনার ভ্যাকসিন নিয়ে সরকারি স্তরে গবেষনা যে কি হচ্ছে তা খুবই সন্দেহজনক। গবেষণা কতদূর তার কোন খবরই পাওয়া যাচ্ছে না । টুকটাক যা শোনা যায় তা কোন বিজ্ঞানের আলোচনা সভা থেকে নয় । সরকার শোনায় চুড়ান্ত আবিষ্কারের দিন ক্ষণ, যা বিজ্ঞানের কোন আবিষ্কারের ক্ষেত্রে বলা যায় না। এতে সন্দেহ আরো বাড়ে। এমন বিপদের দিনে সরকার দুমুঠো চাল কাউকে কাউকে দিয়েছে ভোটের তাগিদে ( প্রয়োজন অবশ্যই আছে )  কিন্তু তাই বলে ঔষধতো বিনে পয়সায় দেওয়া যায়না। ঔষধতো কিনতেই হবে এবং সবার ক্ষমতা না থাকুক অনেক বেশি দামে কম মানুষ কিনলে ব্যাবসা ঠিকই হবে। তাই সরকারি স্তরে ভাষনের ( ঘোষণা নয়) মধ্যেও বাজার কথাটি চলে আসছে ( করোনা ভ্যাকসিন বাজারে চলে আসছে- এই জাতীয়) । সরকার বলেই দিয়েছে আমার কিছু করার নেই ( অবশ্য পূষ্প বৃষ্টি, চাল, ডাল ছাড়া এবং ধরে নিন কেউ কিছু পকেটে ঢোকায়‌ নি )। জনগনকে বুঝিয়ে দিয়েছে একটিও হাসপাতাল তৈরি করব না, তবুও তোমারা আমাদের কিছু বলবেই না কারণ তোমাদের একটা বিশাল অংশ আমাদের খুব ভালোবাসো - আর বাকিরা যে ভয় পাও। সরকার গর্বের সঙ্গে জানিয়ে দিচ্ছে হাসপাতালের দরজায় ঘুরে ঘুরে বিনা চিকিৎসায় মর- মরা অভ্যাস কর। শুধু কেন্দ্রীয় অক্সিজেন সরবরাহ থাকে এরকম অনেক হাসপাতাল গড়া যেত - কিন্তু করার দরকার কি ( শাসকের চিন্তা ভাবনা এরকম বলে মনে হচ্ছে) । ( বিঃদ্রঃ- যে কটি তৈরি হয়েছে সেগুলো বেশীরভাগই কোয়ারেন্টাইন কেন্দ্র , বাকি পুরাতন হাসপাতালে নতুন স্টীকার লাগানো) । এই দুর্দিনেও কোভিড পরীক্ষায়  একজন রোগীর কত টাকা খরচ হচ্ছে, যা প্রত্যেকেই ভালো করে জানেন। এটি বিনামূল্যে সরকারের চেষ্টায় করে উচিৎ ছিল না কি? ভেবে দেখুন। হ্যান্ড স্যানিটাইজার-এ ও জি এস টি। আসলে সরকার বলতে যা বোঝায়  ( জনগণের নির্বাচিত অনেক প্রতিনিধিদের নিয়ে গঠিত রাস্ট্রের একটি অংশ যার প্রচুর বেতন ভাতা হিসেবে পান ও আমাদের ভালো মন্দের দেখা শোনা করেন) যা কিন্তু নয়। এই সমাজ ব্যবস্থায় আসল চালক কর্পোরেটমহল যারা নেতা তৈরি করে, সংবাদ চ্যানেল খোলে, এরাই খবর তৈরি করে, কি নিয়ে জনগণ মেতে থাকবে -সুকৌশলে এ পরিবেশ তৈরি করে। আপনি কিভাবে উপার্জনের চেষ্টা করবেন, চাকরি ক্ষেত্রে কিভাবে কাজ করবেন, উপার্জনের টাকা কিভাবে ব্যয় করবেন, আপনার চিন্তা ভাবনা কিরকম হবে - এই সবকিছু কর্পোরেট দুনিয়ার হাতে। আর দিনের শেষে ভাত জুটবে কি জুটবে না- এরকম মানুষের কথা কর্পোরেটদের ভাবার বিষয় নয় কারণ এদের দিয়েতো ব্যবসা হবেনা। এই ভাবেই বছরের পর বছর নেতা আসে নেতা যায় , আর বাকি সবকিছু চলতে থাকে এবং কর্পোরেট তার ব্যবসা বুঝে নেয়। কিন্তু ক্রমে বিশ্বের প্রযুক্তিতে উন্নতি , বিশ্বায়ন ,অল্প দামের জিনিসপত্র বাজারে আসার ফলে ও বিদেশী কোম্পানির এ দেশে ব্যবসার অনুমোদনের ফলে  দেশীয় সম্পদ বিদেশে যায়, শিল্প, কলকারখানা বন্ধ হতে থাকে- আর বেকার সমস্যা প্রবল হতে থাকে। জনগণ ক্রয় ক্ষমতা হারাতে থাকে। তখন ঐ কর্পোরেট ঢুকে পড়ে ভূষিমাল দোকানী, মাছ দোকানী হিসেবে শপিং মল রূপে, ঢুকে পড়ে সরকারি ট্রেনের হকার হিসেবে, ঢুকে পড়ে সরকারি স্কুল কলেজের ক্যান্টিনে, স্টেশনারী দোকানে।  বেকারত্ব আরো প্রবল হতে থাকে। ফল স্বরূপ কর্পোরেট দুনিয়াতে ব্যবসায় ক্ষতি। তা হলে কি নিয়ে ব্যবসা হবে? আদায় করলো শিক্ষা বেসরকারীকরনের ছাড়পত্র। গজিয়ে উঠলো বেসরকারী স্কুল কলেজ। এখন স্কুল গুলোতে কিছু ব্যবসা হলেও কলেজগুলোর অবস্থা খুব খারাপ। এরা তাই ধরেছে শেষ ব্যবসা- স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় টাকা খাটানো। বিগত কয়েক বছর ধরে এই ব্যবসাই চলছে। আর করোনা এসে এক সুবর্ণ সুযোগ এনে দিয়েছে। ফলে সরকারের হাত ধরে বিনামূল্যে করোনা ভ্যাকসিন পাবেন এটা ভুলে যান। সরকারের কোনো গবেষণাগারে এর আবিষ্কার হলেও তার প্রকাশ ঘটবে কর্পোরেটদের হাত হয়ে প্রচুর দামের লেবেল লাগিয়ে বাজারে আসার মাধ্যমে। সরকারে থাকা দলকে প্রচুর ভালোবাসার মানুষ আছেন এবং আমাকে সরকার বিরোধী ভাবছেন। আমার আপত্তি নেই কিন্তু আপনার বিরোধিতা করছি এরকম ভাববেন না। খুব কষ্ট হয় কারন একজন রোগী হিসেবে আমার ও আপনার দশা একই রকম হবে। যেমন শিক্ষাক্ষেত্রে, চাকরি ক্ষেত্রে সবার অবস্থা একই। অবশ্য আপনি কোন বড় ( যিনি বেশি টাকা করেছেন) নেতা বা সেলিব্রেটি হন তাহলে একটু আলাদা অবস্থা। একটা অসুখ হলে যত জন ও যত ভালো ডাক্তারের কাছে যান না কেন সবাই ডায়াগনোসিস রিপোর্ট চাইবে রোগের কারন বোঝার জন্য। এই সমাজ ব্যবস্থাও অসুস্থ মনে প্রাণে। তাই ডাক্তার  পাল্টে ঔষধ চাওয়ার আগে রোগের কারন নিয়ে একটু ভাবুন।  কমেন্ট বক্সে ঝগড়া করার আগে ভেবে নেবেন নিজের বিরুদ্ধে নিজে ঝগড়া করছেন না তো।

No comments:

Post a Comment