বিদেশী মাইক্রোফোন, বিদেশী ক্যামেরা, বিদেশী কম্পিউটার ব্যবহার করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনাদের বললেন স্ব-নির্ভরশীল হও, আর আপনি বিদেশী ফোন ব্যবহার করে ওই বার্তা সবার কাছে পৌঁছে দিলেন। এক্ষেত্রে শুধুযে ফোনটা বিদেশী তা নয় Facebook, whatsapp, Twitter, instagram সবই বিদেশী। আমরা ভারতবাসী হয়ে গেলাম স্ব-নির্ভরশীল । উদ্ভাবনী ও প্রযুক্তিতে ভারত বিশ্বের নিরিখে ৫২ নম্বরে। তাই প্রতিদিন আপনি যেসব প্রযুক্তি ব্যবহার করছেন বেশিরভাগই বিদেশী । মৌলিক বিজ্ঞান বিষয়ক গবেষণায় বহু ভারতীয় অবদান রাখলেও আবিষ্কারের স্বত্ব রেখে আসতে বাধ্য হন বিদেশী প্রতিষ্ঠানে - গবেষণাগারে। এই ব্যাপারে বলা যায় IIT গুলো সারা বিশ্বের নিরিখে ১০০ নম্বরের মধ্যে আছে কিনা সন্দেহ। ছাত্র, গবেষক, শিক্ষক কাউকে ছোট করছি না। উল্টে বলাযায় যা পরিস্থিতি তার তুলনায় উনারা অনেক বেশি করেন। পরীক্ষা মূলক গবেষণা খুবই কম হয় আমাদের দেশে। বেশিরভাগ পরীক্ষা মূলক গবেষণার পরীক্ষা হয় অন্য দেশে, গবেষক এর data analysis করে একটি কম্পিউটার ও সফ্টওয়্যার ব্যবহার করে। আবার এই যে কম্পিউটার ও সফ্টওয়্যার সবই বিদেশী ও প্রচুর দামি। না সখে কেই এগুলো কেনা হয়েছে এরকম নয়। আমাদের দেশে নেই তাই বাধ্য হয়ে কিনতে হয়েছে। কিছু পরীক্ষা মূলক গবেষণা হচ্ছে না এরকম নয়। কিন্তু তাতেও প্রায় সমস্ত যন্ত্রপাতি বিদেশী। এক্ষেত্রেও বাধ্য হয়ে কেনা। দেশীয় যন্ত্র যে নেই। তার উপর বিজ্ঞান গবেষণা খাতে অনুদান এত কম যে বহু মূল্যবান একটি যন্ত্র একটি প্রতিষ্ঠানে একটির বেশি নেই। একটি নমুনা পরীক্ষা করতে ৬ মাস আগে থেকে নাম জমা দিতে হয়। এই solid state device এর যুগে সামান্য XRD test এ slot একমাস আগে নাম নথিভুক্ত করতে হয়। এর ওপর একটি পেটেন্টের জন্য ৫০০০০/--- ব্যায় করতে হয়। একজন চিকিৎসক, একজন অধ্যাপক তার আবিষ্কারের স্বত্ব সংরক্ষিত রেখে কোম্পানি খুলতে পারেন না কারণ তিনি সরকারি কর্মচারী। অমর গোপাল বোস ( BOSE corporation) মনি ভৌমিক ( LASER এর উপর কোম্পানি) , ইনারা MIT এর অধ্যাপক, বিজ্ঞানী নিজেদের আবিষ্কারকে প্রযুক্তিতে রূপান্তরিত করতে কোম্পানি খুলেছেন , প্রযুক্তির গবেষনার টাকা তুলেছেন, গবেষণা এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। ইনারা আমাদের দেশের কোন নামী প্রতিষ্ঠানের অধ্যাপক হলে কিন্তু সম্ভব হতনা কারন- সেই সরকারি চাকরি।ফলে বিজ্ঞান-প্রযুক্তির বেহাল দশা। শিল্প গড়ে তুলতে এটি একটি প্রধান বাধা। তাই সস্তায় বা বেশি দামে বেশির ভাগ প্রয়োজনীয় ও অতিপ্রয়োজনীয় জিনিস ভারতবাসীকে কিনতে হচ্ছে বিদেশ থেকে। এই দেখুন না ফোনের চার্জারটাও চীনের তৈরি। ৬০/- টাকাতে পাওয়া যায়। একটি দেশী চার্জার খুঁজে দিতে পারবেন ? না মনেহয়। তাই বিদেশী দ্রব্য বর্জন করুন বললেই কি বর্জন করা যায় ? আগেতো সস্তায় উৎপাদন হোক । শুধু সস্তায় কেন বলছি, এমন প্রচুর জিনিস আছে যা প্রচুর টাকা দিয়েও দেশীয় প্রযুক্তিতে পাওয়া সম্ভব নয়। তাই বিদেশী দ্রব্য বর্জন করুন বললেই বর্জন করা যায় না। আর প্রধানমন্ত্রী নিজের প্রতি সাধারণ মানুষের ক্ষোভকে অন্যদিকে ঘুরিয়ে দিতে এই বক্তব্য রাখেন। আর আপনাকে বলছেন স্বনির্ভরশীল হও, বিদেশী দ্রব্য বর্জন করুন--- আর একেরপর এক দেশীয় সম্পদ বিক্রি করছেন বিদেশীদের। আর আপনারা যারা এই আবেদনে আপ্লুত হয়ে দুনিয়ার মানুষের কাছে পৌঁছে দিলেন সোস্যাল মিডিয়ায়, আপনাদেরকে একটি কথা বলেই শেষ করব আপনারা কি বিদেশী দ্রব্য বর্জন করতে পারবেন এই মুহূর্তে। আর যদি বলি আগে সব বিদেশী দ্রব্য বর্জন করুন তারপর share করুন , তাহলে কিন্তু এই বিষয়ে ( বিদেশী দ্রব্য বর্জন করুন) একটিও share বা post চোখে পড়ার কথা নয়। শেষে বলি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীও বিদেশী পোশাক, গাড়ি, উড়োজাহাজ ত্যাগ করতে পারবেন না। এমনকি পকেটের কলমটাও নয়।
No comments:
Post a Comment